বাংলাদেশ একটি উষ্ণপ্রধান দেশ,এখানে বছরকে ছয়টি ঋতু ও মাসকে বারোটি ভাগে বিভক্ত।একেক ঋতুর এক
এক ধরণের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমাদের এ দেশের সৌন্দর্য্য ও ঋতু বদলের বৈশিষ্ট্য আর কোথাও পাওয়া যাবে না।এ
সকল সৌন্দর্য্য নিয়ে কবি- সাহিত্যিক মনীষিগণ কবিতা লিখেছেন,গায়কেরা গান করেছেন আরো কত কি! এখন
ছয়টি ঋতুর বৈশিষ্ট্য নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করা যাক।
১. গ্রীষ্মকাল:
গ্রীষ্মকাল বাংলাদেশে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাস। ইংরেজি মাসের এপ্রিল এর মাঝামাঝি(১৪) থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি(১৪)
তারিখ পর্যন্ত।
গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া সূর্যের প্রচন্ড তাপের কারণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভূমি, পুকুর নদীর পানি শুকিয়ে যায়, অনেক নদীই
শুকিয়ে যায় , জলশূণ্য মাটিতে রোদের ঝলকে ধরে ফাটল। গ্রীষ্মকালের শুরুতে সন্ধ্যাসমাগত সময়ে ধেয়ে আসে
কালবৈশাখী।এ ঝড়ের তান্ডবে গাছপালা বাড়িঘর ভেঙ্গে দিয়ে যায়। এ ঋতুতে বৃষ্টিপাত হয়না বললেই
চলে।পহেলা বৈশাখ বাংলার মানুষে একটি ঐতিহ্য আচার-অনুষ্ঠান। বাঙালি ও নৃ-গোষ্ঠীরা আনন্দের দিন হিসাবে
পরিচিত। গ্রীষ্মকালে জনজীবণ গরমের তাপতাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।আর জৈষ্ঠ মাসকে মধুমাস বলা হয়। এ মাসে নানা
রকমের মিষ্টি ও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ফল পাকে। ফুল-ফলের সুঘ্রাণে মৌমাছি আসে তারা মধু সংগ্রহ করে।
আরও পড়ুন: গ্রীষ্মকালের ফল ও ফুল কি কি।
২. বর্ষাকাল:
বর্ষাকাল বাংলাদেশে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস ।ইংরেজি মাসের জুন এর মাঝামাঝি(১৫) থেকে আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি(১৫)
তারিখ পর্যন্ত।
গ্রীষ্মকালের জীর্ণ আবহাওয়াকে বর্ষাকাল সিক্ত করে দিয়ে যায়। বর্ষাকালে সারাদিন টুপটাপ বৃষ্টির পড়ে। মনে হয় নদী
তার প্রাণ পেয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে আকে বাকে।অনেক নিচু এলাকায় বন্যা দেখা দেয়।পানির জীবগুলো নতুন পানিতে ডিম সারে।
সারাদিন বৃষ্টির কারণে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না।এ ঋতুতে কৃষক ভাইরা জমি তৈরিতে বাস্ত
থাকেন।অনেক ছোট ব্যাবসায়িদের আয় রোজগার কমে যায়।
৩. শরৎকাল:
শরৎকাল বাংলাদেশের ভাদ্র ও আশ্বিন মাস । ইংরেজি মাসের আগষ্ট এর মাঝামাঝি(১৬) থেকে অক্টোবর মাসের
মাঝামাঝি(১৬) তারিখ পর্যন্ত।
এই সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পত্র ঝরা বৃক্ষের পাতার ঝরে যাওয়া । কাশফুল, পরিষ্কার নীল আকাশ আর সবুজ
মাঠ সমারোহ। সময়ের বিবর্তনে গ্রামে- গঞ্জে কাশফুলের আধিক্য কমে গেছে । কাশফুল বাংলাদেশী শরতের বৈশিষ্ট্য
আর অনেক দেশের শরতের আসল রূপের শান্তনা মাত্র. পাহাড় নানা রকম ফুলের সমারোহ
নিয়ে সুন্দর এ শরত । বর্ষার বিষণ্ন বিধুর নিঃসঙ্গতার পর প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে ঋতুরানী শরৎ এসেছে । মেঘমালারা সুপ্ত
রঙের খেলা করে আকাশপানে ।শরতের সকালটা মেঘ আর নীলের বিস্তৃত দিগন্ত দেখেই বোঝা যায়,
শরৎের শুভ্রতা আনে প্রকৃতির মাঝে । ভোরে ঘাসের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হাটতে গিয়ে শিশিরের স্পর্শে শিহরিত হয়
মন ।
৪. হেমন্তকাল:
হেমন্তকাল বাংলাদেশে কার্তিক-অগ্রহায়ণ এ দু মাস ।ইংরেজি মাসের অক্টোবর মাস এর মাঝামাঝি(১৭) থেকে ডিসেম্বর
মাসের মাঝামাঝি(১৫) তারিখ পর্যন্ত।
এই ঋতু কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে. সকালের শিশির ভেজা ঘাসে ভেসে ওঠে হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি শীতের বার্তা। মাঠের পাকা সোনালি ধান, কৃষকের ধান ঘরে আনার দৃশ্য, কৃষকের আনন্দ সবই শীতের দৃশ্যের অংশ। বৈচিত্র্যের আড়ালে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে শীত। শীতকালে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন খেলাধুলা হয়।সকালের আকাশে হালকা কুয়াশা, শিশিরে ভেজা মাঠ, তারপর ধীরে ধীরে আবহাওয়া গরম হতে শুরু করে। সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য লালিমা বাংলার শীত ঋতুর রাণী।
৫. শীতকাল:
শীতকাল হলো পৌষ-মাঘ এ দু মাস। ইংরেজি মাসের ডিসেম্বর মাস এর মাঝামাঝি(১৬) থেকে ফেব্রুয়ারির মাসের
মাঝামাঝি(১৩) তারিখ পর্যন্ত।
আকাশ মেঘহীন এবং নীল থাকে। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা বাতাস বহে। এই মৌসুমে গাছের পাতা শুকিয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে। তাই, প্রকৃতি খালি দেখায়। বেশির ভাগ গাছের পাতা ঝরে। তখন সেগুলো দেখতে কঙ্কালের মতো মনে হয়। ঘন কুয়াশার কারণে সবকিছু ধূসর দেখায়। শীতকালে আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর থাকে। পিঠাপুলির মাস হলো শীতকাল।শীতকালে নানা রকমের বাঙালি বধুরা পিঠাপুলি তৈরী করে থাকে।
আরও পড়ুন: শীতের পিঠাপুলি
৬. বসন্তকাল:
বসন্তকাল ফাল্গুন-চৈত্র এ দু মাস হয়ে থাকে। ইংরেজি ফেব্রুয়ারির মাস এর মাঝামাঝি(১৪) থেকে এপ্রিলে মাসের
মাঝামাঝি(১৩) তারিখ পর্যন্ত।
বসন্তকালকে ঋতুরাজ বলা হয়। এ ঋতুতে গাছে গাছে ফুল ফোটে,ফুলের গন্ধে ভোমরেরা ছুটে বেড়ায়। মৌমাছি মধু আরহনে বাস্ত থাকে।
পত্র পতনশীল যে গাছগুলা তাদের নতুন পাতা গজাই। এ ঋতুতে মাঝে-সাঝে বৃষ্টিপাত দেখা যায়।এছাড়া সবজি বাজারে সবজি কমে যায় এবং চৈত্রের শেষের দিকে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব পালন করে থাকে নানা গোষ্ঠীরা।
এই হলো আমাদের ছয় ঋতুর বাংলাদেশ।
উল্লেখ এই যে-এ ঋতুগুলা এখন ঠিক সময় আগমন ও প্রস্থান করতেছেনা। এর প্রধান কারণ গাছপালা ধ্বংস । এখন বর্ষার ঋতু আসে শ্রাবণ,ভাদ্র,আশ্বিন মাস হয় প্রায়। এতে করে যারা জলজ প্রাণী আছে তাদের জীববৈচিত্র বাধা সৃস্টি করে।
এছাড়া নানা কারণ-কল কারখানার ধৌয়া,পলিথিনের ব্যাবহার,সিএফসি ।
পরিবেশের অবস্থা বাচাতে হলে আমাদের বেশী বেশী বৃক্ষরোপণ,শিল্প কারখানার ময়লাগুলোকে বিশোধন করে পরিবেশে ফেলতে হবে,সর্বপরি টেকসই উন্নয়ন ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।