মাটি কি?(What is soil?)
মাটি কঠিন পদার্থের বিচূর্ণ ছোট ছোট টুকরা পানি ও বায়ুর সমন্বয়ে গঠিত একটা যৌগিক পদার্থ।
এছাড়াও রাশিয়ান বিজ্ঞানী ডোকুচেভের মতে, "মৃত্তিকা হচ্ছে একটা গতিশীল মাধ্যম, কারণ মৃত্তিকা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত ও পদার্থের সংযোগে সুগঠিত হয়"
মৃত্তিকা একটা নির্দিষ্ট গতিশীল অঞ্চলে নানাবিধ রাসায়নিক ও জৈবিক ক্রিয়া ঘটে , মৃত্তিকা সমস্ত উদ্ভিদের পুষ্টি ও বৃদ্ধির উৎস। মৃত্তিকার উৎপত্তি গঠন বিন্যাস ও জীবের সঙ্গে আন্তঃক্রিয়ার সম্পর্কীয় বিজ্ঞানকে পেডোলজি (PEDOLOGY)বলা হয়।
আরো অনেক বিজ্ঞানী এগুলোর সংজ্ঞা দিয়েছেন।
পৃথিবীর শক্ত আবরণের সবচাইতে উপরের স্তরকে মাটি বলে
পৃথিবীর উপরিভাগে যে নরম স্থলে গাছপালা মূল স্থাপন করে রস শোষণ করে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায় তাকে মাটি বলে
গাছ কোথায় জন্ম নেয় মাটিতে আর সেই মাটি কিভাবে দূষিত হয় সে সম্পর্কে, মৃত্তিকার গঠন, আরো মৃত্তিকা কিভাবে আমরা দূষণ করেই চলছি, ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আজকের পোস্ট।
চলেন তাহলে আলোচনায় আসা যাক। বৃক্ষ সাধারণত মাটিকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকে, বৃদ্ধি পায়।
মৃত্তিকার উপাদান(Constituents of soil)
পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপাদান মাটির গঠন উপাদান গুলো হল-
১. খনিজ কাঠামো।
২. জৈব পদার্থ।
৩.বায়ু।
৪. পানি।
১. খনিজ উপাদান (Mineral matter):
মাটির প্রধান অংশ হলো অজৈব পদার্থ যা শিলা বা খনিজ উপাদান হতে এসেছে তাই এই অংশকে অজৈব উপাদানও বলে। উদ্ভিদের খাদ্য উপাদানের প্রধান উৎস হল এই খনিজ দ্রব্য। মাটি খনিজ দ্রব্যের মধ্যে সিলিকন যৌগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫%। অন্যান্য খনিজ দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
২.জৈব দ্রব্য(Organic matter):
উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহাবেশেষ থেকে যেসব পদার্থ মাটিতে যোগ হয় তাদেরকে জৈব পদার্থ বলে। জৈব পদার্থের কারণে মাটির পানি ও তাপ ধারণ ক্ষমতা, বায়ু চলাচল অনু জৈবিক কার্যাবলী ইত্যাদি বৃদ্ধি পায় এবং মাটির ক্ষয়রোধ হয়, মাটির জৈব পদার্থ ক্রমান্বয়ে হিউমাসে পরিণত হয়।
যা উদ্ভিদের খাদ্য উপাদানের আধার হিসেবে কাজ করে।জৈব পদার্থের উপস্থিতি সাধারণত ৫ থেকে ১০% হয়ে থাকে।
৩.বায়ু(Air):
মৃত্তিকা উপস্থিতি বায়ু পানির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। মাটিতে পানির উপাদান বাড়লে বায়ুর পরিমাণ কমে যায়। আবার পানির পরিমাণ বেশি কমলে বায়ু এসে সেই ফাঁকা স্থান দখল করে তাই শুকনা মাটিতে বায়ুর পরিমাণ বেশি থাকে। বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক বায়ু অপেক্ষায় মৃত্তিকার বায়ুতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেশি থাকে। আদর্শ মাটিতে বায়ুর উপাদান সাধারণত ২৫% হয়ে থাকে।
৪.পানি(Water):
মৃত্তিকার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল পানি। মৃত্তিকা কণার ফাঁকে ফাঁকে পানি অবস্থান করে মৃত্তিকা স্থিত এ পানির গাছের প্রয়োজনীয় পানির উৎস। মৃত্তিকায় মৃত্তিকাস্থ পানিগুলো হল মুক্ত পানি, কৈশিক পানি ও জলীয় পানি বা আর্দ্রিক পানি।
মৃত্তিকা পানির সাথে অনেক খনিজ দ্রব্য থেকে থাকে যা বৃক্ষ দেহে শোষিত করে। মাটিতে পানির পরিমাণ সাধারণত ২৫ থেকে ৩৫% হয়ে থাকে।
মৃত্তিকার দূষণ(Soil pollution)
মাটি দূষণ আমরাই করে থাকি।মৃত্তিকা দূষণ পরিবেশের দূষণের একটি অংশ।ব্যাপকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। নগরায়ন শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়া শিল্প কারখানার বর্জ্য সমূহ সঠিকভাবে পরিশোধন না করা জনসংখ্যার অসচেতনতা ইত্যাদি কারণে মাটি বা মৃত্তিকা দূষিত হয়ে থাকে এছাড়াও আরো কিছু কারণ গুলো হল কৃষিকাজে মাত্রাতিরিক্ত পেস্টিসাইডে ব্যবহার করা।
শিল্প পৌর সংস্থার বর্জ্য পদার্থের স্থানান্তরের অনিয়ম। প্রাণীর দ্বারা রোগ জীবাণুর বিস্তার। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থের স্থানান্তরে অনিয়ম।
মৃত্তিকার দূষণের ফলে প্রভাব(Effect of soil pollution)
এখন আমরা জানবো মৃত্তিকা বা মাটি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব গুলো কি কি হতে পারে সেগুলো সম্পর্কে। মৃত্তিকা বা মাটির দূষণ ঘটলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাটি দূষণের ফলে মাটির অম্লত্ব বেড়ে গেলে তাতে ফসল ভালো হয় না।
মাটি দূষণ হলে মাটির অবস্থানকারী উপকারী পোকামাকড় বেঁচে থাকতে পারেনা।
এর ফলে মাটি শক্ত হয়ে যায় এবং উর্বর শক্তি কমে যায়। মাটি দূষণের ফলে পানিও দূষিত হয়ে পড়তে পারে। এর ফলে দূষিত মাটিতে উৎপাদিত কৃষি জাত দ্রব্য খাদ্য, দুধ প্রভৃতি দূষিত হয়ে পড়ে। তেজস্ক্রিয়তার ফলে মাটি দূষিত হয়ে উদ্ভিদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তেজস্ক্রিয় মাটি থেকে ক্যান্সার রোগ ও হতে পারে।
মাটিতে সীসার পরিমাণ বেড়ে গেলে মানব জীবনের স্বাস্থ্যর উপর প্রভাব পড়ে।
মস্তিস্ক বৃক্ক কোষের ধ্বংস,রক্তচাপ বৃদ্ধি,গর্ভপাত,মৃৎসন্তান জন্ম এছাড়া আরো সমস্যা হতে পারে।